দেবী নয়, মানবী হতে চান শর্মিলা
প্রতিক্ষণ ডেস্ক:
অবশেষে শেষ হলো ভারতের মণিপুর রাজ্যের লৌহ মানবী ইরম শর্মিলা চানুর ১৬ বছরের অনশন। এবার ভোটে লড়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চান তিনি।
মঙ্গলবার বিকেল চারটা ২২ মিনিট। শর্মিলার ডান হাতে একটুখানি মধু ঢেলে দেন নার্স। কিন্তু মুখে তুলতে পারলেন না। পরের দেই মিনিট ধরে শুধুই কেঁদে চললেন। বিকেল চারটা ২৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ড। হাতে ঢেলে দেওয়া মধু আঙুলে নিয়ে জিভে ঠেকালেন। একটু যেন বিকৃতও করলেন মুখটা। শেষ হলো স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সত্যাগ্রহ আন্দোলন।
ততক্ষণে চানুর সঙ্গিনীরা ভেঙে পড়েছেন কান্নায়। সে কান্না আনন্দের নয়, আক্রোশের। আশপাশে দেখা গেল না পরিবারের কাউকেই। কিন্তু চানু তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। বললেন, ‘আমি দেবী হয়ে বাঁচতে চাই না। এটা আমার জীবন। সিদ্ধান্ত আমি নেব। মানুষের ওপর আস্থা রয়েছে। তাঁরা আমার পাশে থাকলে নির্বাচনে জিতে আফস্পা হটাবই।’
২০০০ সালের ২ নভেম্বর মণিপুরের মালোম বাসস্ট্যান্ডে ১০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে জঙ্গি সন্দেহে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে এবং মণিপুরে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহারের দাবিতে সে বছরই ৪ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন শর্মিলা। নয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট শর্মিলা মায়ের কাছে শপথ করেন, আফস্পা যত দিন প্রত্যাহার না হবে, তত দিন বাড়ি ফিরবেন না, মায়ের মুখও দেখবেন না। কিন্তু গত ২৬ জুলাই অনুগামীদের পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে আদালতে হঠাৎ শর্মিলা ঘোষণা করে বসেন, তিনি অনশন ভাঙতে চান। বিয়ে করতে চান। লড়তে চান ২০১৭ সালের নির্বাচনে।
কিন্তু নিকটাত্মীয় থেকে শুরু করে তাঁর আন্দোলনের সঙ্গীরা, কেউই যে আপাতত চানুর ওপর আস্থা রাখছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে অনশন ভাঙার কিছুক্ষণের মধ্যেই। অনশন ভাঙার আগেই চানুর দাদা সিংহজিৎ জানিয়ে দেন, মা সখীদেবী চান না ‘পরাজিত’ মেয়ে বাড়ি ফিরুক। মুক্ত হওয়ার পরে চানু অবশ্য নিজে জানান, আফস্পা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। তাই বাড়ি ফিরছেন না তিনি। মায়ের সঙ্গে দেখাও করছেন না।
অনশন ভেঙে ‘দেবী’ থেকে ‘মানবী’ হওয়ার দেই ঘণ্টার মধ্যে শর্মিলা বুঝে যান, যে মণিপুরের মুখ ছিলেন তিনি, সেই মণিপুর এখন আর তাঁর সঙ্গে নেই।
শর্মিলার এতদিনের সঙ্গীরা বলেন, অনশন ভেঙে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন শর্মিলা। অনেকে আবার বলছেন, এ সবই সরকারের চক্রান্ত। জোর করে শর্মিলাকে দিয়ে এ সব করানো হচ্ছে। সবার আক্রোশ শর্মিলার প্রেমিক ডেসমন্ডের ওপর। অনেকেই মনে করছেন, ডেসমন্ড আসলে ভারত সরকারের পাতা ফাঁদ।
তবে শর্মিলা বলেন, ‘মানুষ আমায় সাধারণ মেয়ে হিসেবে কেন দেখে না? আমি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। অনশন ভাঙতে চাই। রাজনীতিতে নামতে চাই। আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাই। ক্ষমতা হাতে না এলে আইন বদল করা যাবে না।’ সূত্র : আনন্দবাজার।
প্রতিক্ষণ/এডি/একে
=====